মেশিন রিডেবল পাসপোর্টকে (এমআরপি) সরিয়ে ই-পাসপোর্ট চালু হবে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। তবে শুরুতে দুই বছর পাসপোর্ট অধিদপ্তর দিনে মাত্র দু হাজার পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সারা দেশের চাহিদা ২০ হাজারের বেশি।
শুরুতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকার উত্তরা, ক্যান্টনমেন্ট, যাত্রাবাড়ী ও বাংলাদেশ সচিবালয় অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় আগারগাঁও থেকে আপাতত ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে না। এর প্রধান কারণ, জার্মান প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচ দেশের সব জায়গায় ই-পাসপোর্ট তৈরির মেশিন বসাতে পারেনি। পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ভেরিডোসের পক্ষ থেকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে, দেশের সব জায়গায় মেশিন বসাতে তাদের অন্তত দুই বছর সময় লাগবে। যদিও চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। প্রথম দফায় ব্যর্থ হওয়ার পর তারা বলেছিল, জুলাই থেকে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে। সেই দফায়ও প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয় দফায় ১ জানুয়ারি থেকে সীমিত আকারে ই-পাসপোর্ট চালু করা সম্ভব হবে বলে ভেরিডোসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শুরুতে সীমিত পরিসরে উৎপাদন এবং প্রধান কার্যালয়ে থেকে ই-পাসপোর্ট চালু না হওয়ার সিদ্ধান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক সাইদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভালো একটা কাজ করতে যাচ্ছি। তাই ধীরে শুরু করাই ভালো। সক্ষমতা বাড়ার পর আস্তে আস্তে আমরা উৎপাদন বাড়াব।’
ই-পাসপোর্টের অগ্রগতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনের সময় ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) আধুনিক ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরপর শেখ হাসিনার জার্মানি সফরের সময় ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার টু সরকার ভিত্তিতে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি হয় জুলাই মাসে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ২০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বই এবং ২০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল আমদানির প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা আছে ৪১ কোটি টাকা।
জানা যায়, পর্যায়ক্রমে আগারগাঁওয়ের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের সব আঞ্চলিক অফিস ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোয় ই-পাসপোর্টের মেশিন বসানো হবে।এতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। প্রথমে ২০ লাখ পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। বাকি ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে যন্ত্রপাতি স্থাপন করে প্রিন্ট করা হবে।
ই-পাসপোর্টের বিশেষত্ব
১৮ বছরের নিচের এবং ৬৫-এর বেশি বয়সীদের জন্য ৩৪ পৃষ্ঠার বইয়ের মেয়াদ হবে ৫ বছর। অন্যদের জন্য ৬৫ পৃষ্ঠার বইয়ের মেয়াদ হবে ১০ বছর।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্টে বর্তমানের মতো ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। পাসপোর্ট বইয়ের কাভারে আটকানো থাকবে মাইক্রোপ্রসেসর চিপ। এই চিপ পাসপোর্টধারীর পরিচয় বহন করবে। থাকবে ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। এই পদ্ধতি চালু হওয়ার পর প্রতিটি বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে স্বয়ংক্রিয় ই-গেট বসানো হবে। কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট এই মেশিনে দেওয়ার পর সেই তথ্য সঠিক প্রমাণিত হলে ১৮ থেকে ২১ সেকেন্ডের মধ্যে ই-গেট আপনা-আপনি খুলে যাবে।
বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু আছে। এর সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকে ‘পাবলিক কি ডাইরেকটরি’তে (পিকেডি)। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভান্ডার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্যভান্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারে।
সূত্র, প্রথম আলো